মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা এর পাশা-পাশি আজকাল আরও একটি বিষয়ে খুব চাহিদা তৈরি হয়েছে আর তা হচ্ছে internet। অনেকেই বলবে কেন আমরা internet এর সাথে মৌলিক চাহিদার তুলনা করছি, কেননা আজকের দুনিয়ায় ইন্টারনেট ছাড়া কেউ এক মূহূর্ত থাকতে পারছে না। অফিস আদালত থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের প্রায় সকল ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি করোনা-কালীন সময়ে internet এর মাধ্যমে প্রায় সব ধরনের প্রতিষ্টান remote job শুরু করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান শুরু করে মানুষের মাঝে তথ্য ও ভাবের আদান-প্রদান, ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে একে অপরের মাঝে লেনদেন এই ইন্টারনেট ব্যবহার করেই হয়ে থাকে। বর্তমানে এই যুগের ছেলে-মেয়েরা তো সারাক্ষণে ইন্টারনেটের মধ্যে ব্যস্ত হয়েই আছে।
Internet কি (what is internet in Bangla):
মুলত ইংরেজি শব্দ Ethernet থেকে internet শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। অর্থাৎ Enter অর্থ হলো ভিতরে আর net শব্দের অর্থ হচ্ছে জাল, তাহলে ইন্টারনেট শব্দের অর্থ দ্বারায় অন্তর্জাল।
ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক তরঙ্গের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে সংয়োগ স্থাপন করে কাজ করে থাকে। অর্থাৎ বহু সংখ্যাক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম একই সংযোগে পরস্পরের সাথে সংযোগ স্থাপন করে ও প্রয়োজনে যোগাযোগ স্থাপন করে থাকে।
তাহলে আমরা ইন্টারনেট মানে বলতে পাড়ি বিশাল একটি নেটওয়ার্ক সিস্টেম যা সারা পৃথিবী জুড়ে ছরিয়ে ছিটিয়ে থাকা সব কম্পিউটারকে বা ইলেকট্রনিক ডিভাইসকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে একই নেটওয়ার্ক বা সংযোগে যুক্ত করে।
Internet এর ইতিহাস? (History of the internet):

অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি অথবা আরপা (ARPA) যা মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি গবেষণা সংস্থা হিসেবে পরিচিত। ১৯৬০-এর দশকে কিছু সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করতে প্যাকেট সুইচিং পদ্ধতিতে তৈরি করা এক নেটওয়ার্কের মাধ্যম ব্যবহার করা হয়।
শুরুতে এটি পরিচিত ছিল আরপানেট (ARPANET) নামে। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে আইএসপি দ্বারা সবার জন্য এই ইন্টারনেট ব্যবহারে সুযোগ করে দেওয়া হয়। ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি ও পরবর্তী সময় ইন্টারনেট ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে ইন্টারনেটের চাহিদা ও ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
Internet কিভাবে কাজ করে? (How does internet work?):

আমরা জানি যে ইন্টারনেট হলো সারা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত একটি নেটওয়ার্ক সিস্টেম যার মাধ্যমে ডেটা ও মিডিয়া আদান-প্রদান করা হয়। মূলত প্যাকেট রাউটিং সিস্টেম ব্যবহার করার মাধ্যমে ইন্টারনেট কাজ করে, যা সংযুক্ত থাকে ইন্টারনেট প্রটোকল (IP) ও ট্রান্সপোর্ট কন্ট্রোল প্রটোকল (TCP) এর মাধ্যমে।
এই IP ও TCP নিশ্চিত করে যে যাতে বিশ্বের যেকোন যায়গা থেকে যে কোনো ডিভাইসে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। ইন্টারনেট সংযোগ অপটিক্যাল ফাইবার, টেলিফোন লাইন, ওয়্যারলেস বেতার সংযোগ ব্যবহার করে ডিভাইসগুলো একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে।
ইন্টারনেট সকল ডিভাইজকে ওয়াল্ড ওয়াইড ওয়েব (www) এর মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে ও প্রয়োজনে যোগাযোগ করে।
Internet কেন ব্যবহার করা হয়! (Why is Internet used!):

আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি যে ইন্টারনেট কি ও কিভাবে কাজ করে এবং আমরা যারা এই অ্যার্কিটেলটি এখন পড়ছি তারা কিছুটা হলেও ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে জানি কেননা আমরা এই ইন্টারনেট ব্যবহার করেই এই অ্যার্টিকেলটি পড়ছি।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে মানুষ একে অপরের সংঙ্গে যোগাযোগ করে ও নানান তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। ব্যাংকিং সিস্টেমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইন ভিত্তিক লেনদেন করা হয়।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে আজকাল মানুষ বিভিন্ন ধরনের ই-কমার্স ওয়েব সাইট বা শপ থেকে কেনাকাটা করছে, যা মানুষের জীবন যাত্রার মান আরও উন্নত করেছে।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে এক দেশের মানুষ অন্য দেশের মানুষের সাথে খুব সহজে যোগাযোগ করছে এবং এখন যাইলেই ভিডিও কলের মাধ্যমে একে অপরকে দেখতেও পারছে।
ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ খুব সহজে আবহাওয়ার খবর, দেশের ও দেশের বাইরে কোথায় কি ঘটছে তা মুহূর্তের মধ্যে জানতে পারছে।
Internet কিভাবে ব্যবহার করা হয়! (How to use Internet!):
ইন্টারনেট ব্যবহার করতে বিশেষ কিছু করার প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র আপনার অঞ্চলের আইএসপি নেটওয়ার্ক সংযোগকারীদের সাথে যোগাযোগ করে ইন্টারনেট সংযোগ করে নিতে হবে। সেই সাথে আপনি যে ডিভাইসের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চাচ্ছেন, সেই ডিভাইসে ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে।
আপনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকলে আপনি যে কোম্পানির SIM ব্যবহার করছেন তাদের কাছ থেকে ইন্টারনেট ডাটা ক্রয় করে আপনি ইন্টারনেটে সংযুক্ত হতে পারবেন। বিভিন্ন ধরনের ব্রাউজার ও অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে আপনি ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হতে পারবেন।
বিভিন্ন ধরনের কাজে Internet এর ব্যবহার:
বিনোদন ক্ষেত্রে: বিনোদন ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়। মুভি দেখা, গান শোনা, বিভিন্ন ধরনের লাইভ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করা, বিভিন্ন ধরনের Social Media ব্যবহারের মাধ্যমে আড্ডা, অনলাইন টিভি দেখা ও ভিডিও গেইম খেলা ইত্যাদি ইন্টারনেট ব্যবহার করে হয়ে থাকে। আর এসকল কারনে মানুষের মাঝে ইন্টারনেটের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে: শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার ব্যপক হারে হচ্ছে। করোনা-কালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের অনলাইন ক্লাস করে ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। শিক্ষার্থীদের অনলাইন রেজাল্ট, গবেষণার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের তথ্য অনুসন্ধান, তথ্যের আদান-প্রদান ও সংরক্ষণ কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়।
অফিসের কাজে ইন্টারনেটের ব্যবহার: বিভিন্ন ধরনের অফিসিয়াল কাজ যেমন: ইমেইল আদান-প্রদান, প্রয়োজনীয় মিটিং ও সেমিনার, তথ্যের আদান-প্রদান, তথ্যের সংরক্ষণ, কর্মী সংগ্রহ, কর্মী যাচাই-বাছাই, অনলাইন পরীক্ষা ও পরীক্ষার রেজাল্ট ইত্যাদি কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হচ্ছে।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে: বর্তমানে চিকিৎসা ক্ষেত্রেও ইন্টানেটের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। টেলি-মেডিসিন সেবা এখন অনেকেই ব্যবহার করছে। এছাড়াও স্বাস্থ্যগত যে কোন সমস্যায় এখন মানুষ বিভিন্ন তথ্য ও সচেতন মূলক বিভিন্ন বিষয় জানতে পারছে ইন্টারনেট ব্যবহার করার মাধ্যমে।
ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে এখন মানুষ বিভিন্ন দেশে ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরামর্শ নিতে পারছে। স্বাস্থ্য সচেতনা মূলক বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে মানুষ খুব সহজেই জানতে পারছে।
ব্যবসায়িক কাজে Internet এর ব্যবহার: ব্যবসায়ের প্রচার-প্রচারণা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের মাঝে যোগাযোগ স্থাপন, পণ্যদ্রব্যের পরিচিতি, বাজার বিশ্লেষণ, বাজার পরিস্থিতি এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হচ্ছে।
পণ্যদ্রব্যের ডিজিটাল মার্কেটিং করে ব্যবসায়ের সফলতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন বাজার ও ক্রেতার কাছে নিজস্ব পণ্যদ্রব্যের পরিচিতি করাতে পারছে। আর এ সকল সম্ভব হচ্ছে ব্যবসায়ীক ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে।
প্রাত্যহিক জীবনে Internet এর ব্যবহার: আমরা প্রতিনিয়তই ইন্টারনেট বিভিন্নভাবে ব্যবহার করছি। যেমন ধরুন আপনি কোথায় খাবার খেতে যাবেন, আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করে Google map এর সাহায্যে সহজেই খাবারের দোকান বা রেস্টুরেন্ট খুঁজে পেতে পারেন।
কিংবা আপনি কোথায় ঘুড়তে গিয়ে রাস্তা খুঁজে পাচ্ছেন না তখন ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে আপনার কাঙ্খিত ঠিকানা খুঁজতে পারেন। এভাবে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় সকল কিছু খুঁজতে ও প্রয়োজনীয় সকল তথ্য জানতে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।
Internet ব্যবহারে নিরাপত্তার বিষয়:

Internet ব্যবহারে যেমন সুবিধা আছে আবার আপনি অনেক সময় এটি ব্যবহারে ঝুঁকির মধ্যেও পড়তে পারেন। কেননা ইন্টারনেটে যেমন ভালো ভালো বিষয়ের উপস্থিতি রয়েছে তেমনি আবার অনেক খারাপ অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলোর জন্য আপনি অস্থিতির মধ্যে পড়তে পারেন।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনেকে নানা অপরাধের সংঙ্গে জড়িয়ে যেতে পারে তেমনি আবার ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনেকে অনেক ভালো কিছু করতে পারে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে অপরাধীরা নানা ধরনের মাদক ও চোরাচালানের অনেক ধরনের কাজ করে থাকে, আপনাকে অবশ্যই ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে।
এছাড়াও ইন্টারনেটে অনেক মিথ্যা, ভুয়া ও ভুল তথ্য পাওয়া যায় যেগুলো থেকে আপনাকে সর্বদায় সর্তক থাকতে হবে। কেননা মিথ্যা ভুয়া নিউজ বা তথ্য আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে। তাই সঠিক ও নির্ভূল তথ্য জানতে বিশ্বাস যোগ্য ও প্রতিষ্টিত কোন প্রতিষ্টানের তথ্য দেখতে পারেন।
শেষ কথা:
প্রত্যেক বিষয়ের যেমন ভালো দিক আছে আবার খারাপ দিকও রয়েছে। Internet আপনি কোন কাজে ব্যবহার করছেন সেটির উপর নির্ভর করবে ভালো-খারাপের বিষয়। তাই আপনি যাইলে ইন্টারনেটের ভালো দিকগুলো বিবেচনা করে এর সুফল পেতে পারেন, আবার খারাপ কোন বিষয়ের মধ্যে পড়ে নিজের ক্ষতি করতে পারেন। ইন্টারনেট বর্তমান যুগের সবচেয়ে আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম ও একটি সর্বাধুনিক প্রযুক্তিগত অর্জন যা মানুষকে উন্নতির শিখরে পৌছে দিয়েছে।
0 টি মন্তব্য