আমরা যারা ফ্রিল্যান্সিং এ কাজ করি তারা প্রতিদিন বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস ব্যবহার করে আমাদের ক্লায়েন্টের বা বায়ারের সাথে যোগায়োগ করি। ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করতে আমরা বিভিন্ন ধরণের চ্যাটিং- মেসেঞ্জার সিস্টেম ব্যবহার করি। ক্লায়েন্ট অথবা সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট আমাদের সেই চ্যাটিং মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন লিংক বা ডাউনলোড লিংক পাঠিয়ে থাকে। আর আমরা সেগুলি আমাদের প্রয়োজনে ডাউনলোড করি ও ব্যবহার করি। কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তো জানি না, এসকল লিংকের মধ্যে ক্ষতিকর কিছু প্রোগ্রাম থাকতে পারে। সেগুলিতে ক্লিক করলে আমাদের কম্পিউটার সিস্টেম ক্ষতিকর ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারে অথবা আমরা হ্যাকিং এর শিকার হতে পারি। ক্ষতিকর লিংক থেকে আমাদের কি কি ধরণের ক্ষতি হতে পারে ও কিভাবে ক্ষতিকর লিংক থেকে আমরা বাচঁতে পারি, তা নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
হ্যাকিং কি ?
হ্যাকিং হচ্ছে বিনা অনুমতিতে কোন ব্যবহারকারীর সিস্টেমে ঢুকে পড়া ও তার অনুমতি ব্যতিত তার প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেখা বা ব্যবহার করা।
হ্যাকাররা বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর প্রোগ্রামের মাধ্যমে আপনাকে টার্গেট করে আপনার ব্রাউজারে থাকা Save করা Userid, Username ও Password ডাউনলোড করে আপনার গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টের ক্ষতি করতে পারে।
এছাড়াও হ্যাকিং এর মাধ্যমে একজন হ্যাকার আপনার পুরো সিস্টমটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আমরা অনেকভাবে হ্যাকিং এর শিকার হতে পারি।
আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি হ্যাকিং এর শিকারের ঘটনা ঘটে না জেনে-বুঝে আমরা বিভিন্ন ক্রাক সফটওয়্যার ডাউনলোড করি ও তা ব্যবহার করি।
এই সকল সফটওয়্যারে ক্ষতিকর প্রোগ্রাম থাকতে পারে, যা আপনার সিস্টেমের ও মার্কেটপ্লেস এ থাকা যেকোন অ্যাকাউন্টের ক্ষতি করতে পারে।

হ্যাকাররা আপনার তথ্য নিয়ে কি করতে পারে ?
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজে যারা নতুন তাদেরকে হ্যাকাররা বেশি টার্গেট করে। এর কারণ নতুনরা একদিকে যেমন অনভিজ্ঞ তেমনি কাজ পাওয়ার জন্য অধিক আগ্রহি হয়ে থাকে।
তাই তাদের সহজেই উচ্চ মূল্যের প্রলোভন দেখিয়ে বা অধিক কাজের আগ্রহ দেখিয়ে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর লিংকে ক্লিক ও ফাইল ডাউনলোড করতে বলে। ফলে আমরা বা বুঝেই অনেক সময় তা ডাউনলোড করি ও ব্যবহার করি।
আর এর ফলে হ্যাকারের সেই লিংকে ক্লিক করার মাধ্যমে আপনার ব্যবহার করা ব্রাউজারে Save থাকা Bookmark, kookie, Userid, Username ও Password ইত্যাদি ডাউনলোড করতে পারে।
এর কারনে আপনার বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস এ থাকা অ্যাকাউন্টের ক্ষতি করতে পারে বা হ্যাকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে। এর ফলে অ্যাকাউন্টে থাকা কার্ডের তথ্য ও লেনদেনের তথ্য হ্যাকারদের হাতে চলে যেতে পারে বা হ্যাকার সেগুলি ব্যবহার করে আপনার কষ্টার্জিত উপার্জন তুলে নিতে পারে।
এছাড়াও হ্যাকার সব অ্যাকাউন্টের তথ্য হাতিয়ে নিয়ে তার বিনিময়ে আপনার কাজে অর্থের দাবিও করতে পারে।

হ্যাকারের লিংকে ক্লিক পরলে কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে ?
হ্যাকার প্রাথমিকভাবে যেকোন উপায়ে আপনাকে কোন লিংক পাঠাবে, আপনি যেখানে ক্লিক করলে আপনার আইপি অ্যাড্রেস হ্যাকারের কাছে চলে যাবে।
হ্যাকার সেই আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করে আপনার জন্য বিভিন্ন ধরণের Exploit (বা ক্ষতিকারক প্রোগ্রাম) তৈরি করবে। হতে পারে কোন PDF, Images, Audio, Videos ও .EXE ফাইল যেগুলো আপনাকে হ্যাকার যেকোন উপায়ে ডাউনলোড করাবে অথবা আপনার কম্পিউটার সিস্টেমে রান করাবে।
এভাবে হ্যাকাররা টার্গেটের ইউজারদের তথ্য হাতিয়ে নেয়। আর যারা Windows 7 এর মতো অপারেটিং সিস্টেম ফ্রিতেই (ক্রাক) ব্যবহার করেন হ্যাকাররা তাদের লিংক পাঠায়েই ব্রাউজারে Save করা ইউজার-আইডি, ইউজার-নেইম, পাসওয়ার্ড ও ব্রাউজারের কুকিসহ অন্যান্য তথ্য হ্যাকার খুব সহজেই হাতিয়ে নিতে পারে।
কেননা Windows 7 এ আর কোন ফ্রীতে আপডেট বা নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি প্যাচার দিবে না। ফলে আপনি যদি Windows 7 এর প্রিমিয়াম কাস্টমার না হন, তাহলে আপনি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন।
যেভাবে চিনবেন যোগাযোগকারী হ্যাকার না বায়ার:
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা একজন ফ্রিল্যান্সারই ভালো বুঝে। অবশ্যই আমাদের মার্কেটপ্লেস এর অ্যাকাউন্টগুলো সুরক্ষিত ও নিরাপদ করতে হবে।
সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট হ্যাকার হলে সামান্য কাজ ও অতিসহজ কাজের বিনিময়ে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান এবং অধিক পরিমানে কাজের প্রলোভন দেখাবে। প্রজেক্টের তথ্য ভালোভাবে না জানিয়ে আপনার সাথে কাজ করার জন্য সহজে রাজি হয়ে যাবে।
সেই সাথে প্রজেক্টের বিভিন্ন তথ্য জানাতে আপনাকে লিংকে যেতে ও কোন ফাইল ডাউনলোড করতে বলবে। যে লিংকগুলোতে ক্লিক করলে অথবা ডাউনলোড করলে আপনার পুরো সিস্টেমটি হ্যাকারের আওতায় চলে যেতে পারে।
তবে অতি প্রয়োজনীয় মনে করলে লিংক ও ফাইলগুলো ভালোভাবে দেখে ও বুঝে তবেই অগ্রসর হওয়া উচিৎ।

হ্যাকারের লিংক চেনার উপায়:
হ্যাকাররা সাধারনত বিভিন্ন ধরনের ক্লাউডে তাদের ক্ষতিকর প্রোগ্রাম রেখে সেই ক্লাউডের ডাউনলোড লিংক শেয়ার করে এবং সেই লিংক ডাউনলোড করার সাথে অ্যাকটিভ হয়ে যেতে পারে অথবা আপনি যেটি ডাউনলোড করে আপনার কম্পিউটারে তা খুলতে গেলে প্রোগ্রামটি অ্যাকটিভ হয়ে যেতে পারে।
বর্তমান সময়ে বেশির ভাগ হ্যাকিং এর ঘটনা ঘটছে icloud, treasure cloud, Google Drive, Mega Drive এর মতো ড্রাইভ সার্ভিস গুলো ব্যবহার করে। আপনাকে অবশ্যই এই লিংক ভালোভাবে পরীক্ষা করে অগ্রসর হতে হবে।
হ্যাকারের লিংক চেনার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে বিভিন্ন মার্কেট প্লেসের কমিউনিটিতে সবসময় অ্যাকটিভ থাকতে হবে। সেখানে প্রতিনিয়ত নানান হ্যাকিং লিংক সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। হ্যাকারের আইডি ও বিভিন্ন তথ্য দেওয়া থাকে।
সেখান থেকে আপনি এ সমস্ত ব্যাক্তিদের এড়িয়ে যেতে পারেন। এরপরেও কোন অজানা-অচেনা ব্যক্তির নিকট থেকে কোন কিছু ডাউনলোড করার প্রয়োজন মনে করলে আমাদের এই অ্যার্টকেলের নিচের পয়েন্টগুলো ভালোভাবে পড়ুন।

হ্যাকিং লিংকগুলো ঠিক এরকম হয়
মার্কেটপ্লেস এ হ্যাকারের লিংক ও ফাইল থেকে বাচার উপায়:
০১. নিরাপদে লিংক ব্যবহার:
ক্লায়েন্ট যে কেউ যখন আপনাকে কোন মাধ্যম ব্যবহার করে কোন লিংক পাঠাবে, আপনি সেই লিংক সরাসরি একই ব্রাউজারে কখনই খুলবেন না।
সেক্ষেত্রে আপনি একই ব্রাউজারের incognito ও Private Window অথবা অন্য কোন ব্রাউজার ব্যবহার করতে পারেন। এর ফলে হ্যাকার আপনার ব্যবহার করা মূল ব্রাউজারে কোন প্রকার Script চালাতে পারবে না ও আপনার ব্রাউজারের কুকিসহ অন্যান্য তথ্য ডাউনলোড বা হ্যাক করতে পারবে না।

০২. নিরাপদে ফাইল ডাউনলোড করা:
ক্লায়েন্ট অথবা সম্ভাব্য কায়েন্ট কোন ফাইল-ফোল্ডার ডাউনলোড করতে বললে, তাতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা সবচেয়ে হ্যাকিং এর ঘটনা ঘটে ব্যবহারকারীরা এই ফাইল-ফোল্ডার ডাউনলোডের ফলে।
তাই এতে বিশেষ সাবধানতা অবল্বন করতে হবে। কোন ফাইল ডাউনলোড করার প্রয়োজন পড়লে সেই লিংকটি কপি করে https://www.virustotal.com ওয়েব সাইটে গিয়ে ইউআরএল এ কোন ক্ষতিকারক লিংক আছে কিনা তা দেখতে পারেন।
সব সময় যেকোন কিছু ডাউনলোড করতে ব্রাউজারের incognito ও Private Window ব্যবহার করুন এবং সেই সাথে ডাউনলোডের পর ফাইল-ফোল্ডারগুলো অ্যান্টিভাইরাস দ্বারা চেক করুন।

০৩. নিরাপদে ব্রাউজার ব্যবহার:
আমরা অনেক সময় ভুল করে আমাদের বিভিন্ন ওয়েব সাইটের আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্রাউজের Save করে রাখি, এতে করে আমরা বিভিন্ন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারি।
প্রথমত আমাদের কম্পিউটার অন্য কোন ব্যক্তি ব্যবহার করলে সেই ব্যক্তি ব্রাউজারে Save করা আমাদের অ্যাকাউন্টগুলো ব্যবহার করতে পারবে বা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেখতে পারবে।
এছাড়াও অনেক ধরনের ক্ষতিকর সফটওয়্যার পাওয়া যায়, যেগুলি ব্যবহার করে খুব সহজেই ব্রাউজারে থাকা আইডি ও পাসওয়ার্ড এক ক্লিকেই ডাউনলোড করে ফেলতে পারে যে কেউ।
তাই বিশেষ কোন প্রয়োজন ছাড়া আমরা আমাদের মার্কেটপ্লেস এর আইডি-পাসওয়ার্ড কখনই ব্রাউজারে Save করে রাখবো না।
০৪. এন্টিভাইরাস ব্যবহার:
বাজারে বা অনলাইনে এমন অনেক এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার পাওয়া যায়, সেগুলি ব্যবহার করে নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। এতে করে ক্ষতিকর প্রোগ্রাম আছে এমন ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে বাধা প্রদান করে এবং সেই সাথে কোন বোট বা প্রোগ্রামকে ব্রাউজারে কোন ধরনের Script চালাতে দেয় না।
যেমন: “kaspersky internet security”, “avast internet security”, “ESET internet security” ও “AVG Internet Security” ইত্যাদি। এগুলি ব্যবহার করে আপনি নিরাপদে ইন্টানেট ব্যবহার করতে পারবেন।

SmadAV antivirus একটি 2nd layer এন্টিভাইরাস। যেটি আপনার কম্পিউটারকে করবে আরও নিরাপদ ও সুরক্ষিত। এর কাজ মূল এন্টিভারাসের পাশাপাশি আরও কঠিন সিকিউরিটি layer তৈরি করা।
এখানে আমরা শুধু আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে এমন বিষয়গুলি আপনাদের ধরিয়ে দিয়েছি। সর্বপরি আমরা বলতে পারি আপনি হ্যাকিং এর শিকার হবেন কিনা সেটি আপনার সতর্কতার উপর নির্ভর করবে। তবুও আমরা এতটুকুই বলতে পারি, হ্যাকিং থেকে বাচঁতে আমাদের বিষয়গুলো বিশেষ বিবেচনায় নিবেন আমরা আশা করছি।
0 টি মন্তব্য