আমরা প্রায় সবাই কম্পিউটার প্রযুক্তি ও বিভিন্ন Web Application এর সাথে পরিচিত। আমরা নানা কাজে কম্পিউটার ও বিভিন্ন ওয়েব সাইট বা ফোনের মধ্যে থাকা বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে থাকি। এগুলো আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসে পরিণত হয়েছে। আজকের সভ্যতা উন্নতির পিছনে এই বিষয়গুলোর অবদান অনস্বীকার্য, যা আমরা আপনাকে কোন ভাষাতেই বুঝাতে পারবো, বরং উপলব্ধি করাতে পারবো। তাই আজ আমরা আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় Machine Language বা programing language সম্পর্কে জানাবো, যা সভ্যতা উন্নতিতে কতটা গুরুত্বের সাথে কাজ করেছে তা আলোচনা করার চেষ্টা করবো। আপনি আমাদের এই লেখাটি পড়তে পারছেন প্রযুক্তির উন্নতি বিকেশিত হবার জন্যই। এছাড়াও আপনার ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে লেনদেন থেকে শুরু করে কেনাকাটা, গেম খেলা, অনলাইন পত্র-পত্রিকা পড়া, মুভি-শো দেখা, একে অপরের সাথে ভিডিও কলে বা ভয়েজ মেইলে কথা বলা ইত্যাদি সকল কাজেই কিন্তু প্রযুক্তিগত উন্নয়ণের ফলে সম্ভব হয়েছে। আর এর পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান রয়েছে বিভিন্ন ধরনের Machine Language বা programing language এর।
Machine Language বা programing language হচ্ছে কম্পিউটার বুঝতে পারে এমন ধরনের ভাষা, যার সাহায্যে মানুষের নির্দেশনা বুঝতে পারে একটি কম্পিউটার। কম্পিউটার শুধু ০ ও ১ অর্থ্যাৎ বাইনারি সংখ্যা ছাড়া অন্য কিছু বুঝতে পারে না। তবে আবিষ্কার হওয়া নানা ধরণের উন্নত মানের মেশিন ভাষা ব্যবহার করে কম্পিউটারকে খুব সহজেই নানা ধরনের কমান্ড করা যায়। কম্পিউটারকে নানা ধরনের নির্দেশনা দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালনা করা যায়। আমরা পূর্বেই বলেছি সভ্যতা উন্নতিতে প্রযুক্তি নানাভাবে অবদান রেখেছে। মানুষের জীবন যাত্রাকে সহজ ও ঝামেলা মুক্ত করেছে।
পৃথিবীর সেরা ৫টি মেশিন ভাষা যা দিয়ে আপনি অনেক কিছুই করতে পারবেন। সেই সাথে ভাষাগুলো কিভাবে ও কে তৈরি করেছেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন এই অংশ থেকে:
সেরা ৫টি Machine Language বা Programing Language
১. (সি) C:
বর্তমানে অত্যান্ত শক্তিশালী ও জনপ্রিয় উচ্চতর প্রোগ্রামিং ভাষা হিসেবে পরিচিত C ল্যাংগুয়েজ। সি ভাষা উদ্ভাবন হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেল ল্যাবরেটরিতে “ডেনিস রিসি সি” এর হাত ধরে। এই ভাষা তৈরির উদ্দেশ্য ছিল ইউনিক্স অপরেটিং সিস্টেমের কোড লেখার জন্য ব্যবহার করা। কিন্তু অনেক দ্রুতই এই ভাষার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার ও অপারেটিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণে C ভাষার ব্যবহার ব্যাপকহারে শুরু হয়। তাই এই ভাষার গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। Unix, linux, mac এর মতো operating system-গুলো C ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। সি ভাষায় বিট, বাইট, মেমোরি অ্যাড্রেস নিয়ে কাজ করা যায় আবার অন্যান্য ভাষার মতো ডেটা টাইপ নিয়েও কাজ করা যায়। এ ভাষা ব্যবহার করে অত্যান্ত জঠিল সব সমাধান করা যায় ও কম জায়গা ও রিসোর্স নিয়ে তৈরি হয় এমন সফটওয়্যার তৈরিতে “সি” ভাষা বেশ জনপ্রিয়। আজকাল তৈরি করা প্রায় সফটওয়্যারেই C ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করা হয়।
২. (সি++) C++:
C++ বহুল ব্যবহৃত আরেকটি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ। এই ভাষা ব্যবহার করে অনেক আধুনিক প্রযুক্তিগত সফটওয়্যার তৈরি করা যায়। ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এটিএন্ডটি বেল ল্যাবরেটরিতে বিজারনি স্ট্রাউসট্রাপ এর হাত ধরে এই ভাষা তৈরি হয়। শুরুতে এই ভাষার নাম ছিল “সি উইথ ক্লাস”। পরবর্তীতে এই ভাষায় আরও কিছু বৈশিষ্ট্য যুক্ত করে ১৯৮৩ সালে এর নাম করণ করা হয় C++। এই ভাষায় অবজেক্ট অরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম পদ্ধতি সাপোর্ট করায় এটি আরও জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সমর্থ হয়। C++ কে প্রোগ্রামিং ভাষার সুপার সেট বলা হয়। এই ভাষা দিয়ে টেক্সট এডিটর, কম্পাইলার ও ইন্টারপ্রেটার, কমিউনিকেশন সিস্টেম তৈরি, ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এবং Windows ভিত্তিক Operating System এর বিভিন্ন Aplication তৈরি করা হয়। এটি দিয়েই জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার মজিলা ফায়ার ফক্স ও ক্রোমিয়াম-এর বেশিরভাগ কোড লেখা হয়েছে। এই ভাষার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করেই জনপ্রিয় ও শক্তিশালী ভাষা Java তৈরি করা হয়।
৩. (জাভা) Java:
জাভার সিনট্যাক্স মূলত C++ এর মতো করেই তৈরি। জাভা ল্যাংগুয়েজ অন্যান্য ভাষার চেয়ে পোর্টেবল, তাই এটা নিয়ে ক্রসপ্লাটফর্মে সহজেই কাজ করা যায়। সারা বিশ্বের অনেক ভাষা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েই জাভা ভাষা তৈরি করা হয়। জাভা অত্যান্ত শক্তিশালী ভাষা, ডায়নামিক ও সম্পূর্ণ অবজেক্ট অরিয়েন্টেড বেসিস, হাই লেভেলের প্রোগ্রামিং ভাষা। সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বড় টেক জায়ান্ট Google এর Android development করতেও এই জাভা ব্যবহার করেছেন। এছাড়াও শত শত ডিভাইস নিয়ন্ত্রণে ও লক্ষ লক্ষ অ্যাপ্লিকেশন তৈরিতে এই জাভা ভাষার ব্যবহার করা হয়েছে বা আজও এর ব্যবহার ব্যাপকহারে হচ্ছে। ১৯৯১ সালের দিকে জেমস গসলিং-এর নেতৃত্বে একদল গবেষক এই ভাষার উদ্ভাবন করেন। এর লোগো কফির কাপ হওয়ার পেছনেও একটি গল্প আছে।
“James Gosling, Mike Sheridan ও Patrick Naughton” প্রমুখ গবেষক একটি কফি শপে বসে এই ভাষার চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন, তাই এর লোগোও হয়েও ওঠে একটি কফির কাপ। কিন্তু শুরুতে এই ভাষার নাম জাভা ছিল না, শুরুর দিকে এই ভাষার নাম ছিল “ওক (OAK)”। পরবর্তীতে এর নাম পরিবর্তন করে এ ভাষার নামকরণ করা হয় Java। জাভা অন্যান্য ভাষার মতো নির্দিষ্ট কিছু হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার তৈরিতে ব্যবহার হয় না বরং এটি দিয়ে সকল প্লাটফর্মের সফটওয়্যার তৈরি করা যায় এবং হার্ডওয়্যারকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর এই সব কারনে জাভা ভাষার ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা দিন দিন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৪. (পাইথন) Python:
পাইথন বর্তমান বিশ্বের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও হাই-লেভেল প্রোগ্রামিং ভাষার মধ্যে একটি। ডাইনামিক ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন তৈরিতে এই ভাষা ব্যাপকহারে ব্যবহার হচ্ছে। সেই সাথে বিভিন্ন ডেক্সটপ অ্যাপ্লিকেশন তৈরিতেও এই ভাষা ব্যবহার হচ্ছে। জনপ্রিয় linux operating system কিন্তু Python Language উপর বেইজ করে তৈরি করা হয়েছে। আর তাই এতো কিছুর জন্যই Python কে বলা হয় প্রোগ্রামিং ভাষাগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা হাই-লেভেল অবজেক্ট অরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ভাষা। ১৯৯১ সালে নেদারল্যান্ডের বিজ্ঞানী ভ্যান রোসাম এই ভাষাটি উদ্ভাবন করেন। ব্রিটিশ কমেডি শো “মন্টি পাইথন” এর নামে এই ভাষার নাম হয় পাইথন। পাইথনের কোর সিনট্যাক্স ও সেমান্টিক্স খুবই সংক্ষিপ্ত, তবে সেই অনুযায়ী পাইথনে স্ট্যান্ডার্ড লাইবেরি অনেক সমৃদ্ধ। পাইথন ভাষা দিয়ে AI development অনেক সহজ ও সঠিকভাবে করা যায়।
এছাড়াও এর বিল্টইন লাইবেরি অনেক ও দিন দিন এর পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। খুব দ্রুত সফটওয়্যার তৈরিতে পাইথন খুব উপযোগী একটি প্রোগ্রামিং ভাষা। ড্রপবক্স, বিটটরেন্ট, ব্লেন্ডার, গুইবারের মতো সফটওয়্যার তৈরি পাইথনের ব্যবহার হয়েছে। জনপ্রিয় সিভিলাইজেশন ফাইভ গেমটিতে মূল চালিকা শক্তিই ছিল পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষা। এছাড়াও বিশ্বের বড় বড় বেশ কিছু প্রতিষ্টান পাইথন দিয়েই তাদের অনেক কাজকর্ম করে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় Google, NASA ইত্যাদি। এমনকি Google ও Youtube এর সার্সইঞ্জিন-আপইঞ্জিনের মতো সিস্টেমগুলো চলছে Python এর Webkit গুলো ব্যবহার করেই।
৫. (ফোরট্রান) FORTRAN:
FORTRAN শব্দের পূর্ণরুপ হলে Formula Translation। ১৯৫৭ সালে আইবিএম কোম্পানি এই ভাষা চালু করে। ১৯৫৩ সালের দিকে “জন ডব্লিউ বেকুস” IBM 704 মেইনফ্রেম কম্পিউটার এ ব্যবহার করার জন্য FORTRAN ভাষা তৈরি করেন। পরবর্তীতে এই ভাষা অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সমর্থ হয়, কিন্তু কালে বিবর্তনে এই ভাষার পরিচিতি অনেক কমে যায়। সেই জায়গা দখল করে নেয় সি, সি++, জাভা, পাইথন-এর মতো প্রোগ্রামিং ভাষাগুলো। এই ভাষা সাধারণ কাজে ব্যবহার হওয়া কম্পিউটারের চেয়ে হাই-লেভেল বা সুপার কম্পিউটার তৈরিতে বেশি ব্যবহার করা হয়। ফোরট্রান ভাষা অনেক পুরনো হলেও এই ভাষার জনপ্রিয়তা এখনো শেষ হয়নি। এখনো ফোরট্রান-এর ব্যবহার হয়ে থাকে ও এই ভাষা দিয়ে অনেক ধরনের সফটওয়্যার তৈরি হচ্ছে।
শেষ কথা:
আমরা আমাদের লেখার মাধ্যমে ৫টি সেরা Machine Language বা programing language সম্পর্কে আপনাদের সাথে আলোচনা করেছি। সেই সাথে এই programing language -গুলো ব্যবহার করে আপনি কোন কোন ধরনের কাজ করতে পারবেন তা বুঝানোর চেষ্টা করেছি। ভাষাগুলো মধ্যে প্রায় সবগুলো ভাষাই জনপ্রিয় ও অত্যাধুনিক যা নিয়ে অনেক বড় বড় প্রতিষ্টান দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। আমরা এই ভাষাগুলো শিখে বিভিন্ন ধরনের অনলাইন সফটওয়্যার তৈরির পাশাপাশি ডেক্সটপ ভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে পারি। যা দিয়ে আয়ের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত উন্নয়ণের সাথে অংশগ্রহণ করতে পারি। সেই সাথে আমরা আশা করছি আমাদের লেখাটি আপনার পছন্দ হবে! ধন্যবাদ।
0 টি মন্তব্য